ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নারী নির্যাতন মামলায় স্বামী কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
চকরিয়া উপজেলার বরইতলীতে দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে বাপের বাড়িতে এসে ইয়াছমিন আক্তার (২০) নামের এক সন্তানের জননীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি স্বামী মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার আলীকদম থানার পুলিশ ঘটনার পাঁচমাস পর ওই আসামিকে গ্রেফতার করে।

শুক্রবার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আলীকদম থানার ডিউটি অফিসার এসআই এনামুল হক। তিনি বলেন, আসামিকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে বান্দরবান জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ভিকটিমের পরিবার জানায়, চলতিবছরের ৯ ফেব্রæয়ারী সকাল দশটার দিকে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামে গৃহবধূ ইয়াছমিন আক্তারের বাপের বাড়িতে তার উপর ঘটেছে এ অমানবিক ঘটনা। অভিযুক্ত স্বামী মহিউদ্দিন বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের উত্তর পালনপাড়া গ্রামের সৈয়দ আলমের ছেলে। নিযার্তনের শিকার ইয়াছমিন আক্তার চকরিয়া বরইতলী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে।

ইয়াছমিনের পরিবার সদস্যরা জানান, ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ৬ লাখ টাকা দেনমোহরে এবং বিয়ের সময় নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র ও কাপড়-চোপড়সহ সমুদয় মালামাল দিয়ে ইয়াছমিন আক্তারকে মুসলিম আইন মোতাবেক সামাজিকভাবে বিয়ে দেন আলীকদম উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর পালন পাড়া সৈয়দ আলমের ছেলে মহিউদ্দিনের সঙ্গে। বিয়ের পর তাদের সংসারে একবছর বয়সের মুক্তাকিন আবরার রিহান নামের এক ছেলে সন্তানও আছে।

ইয়াছমিনের বাপের বাড়ির লোকজন দাবি করেন, বিয়ের পর সুখের সংসার অতিবাহিত হলেও দুইমাস আগে স্বামী মহিউদ্দিন স্ত্রীর অমতে অপর একজন নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। এ ঘটনার পর মহিউদ্দিন স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারকে পুনরায় বাপের বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার দাবিতে নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এমনকি নির্যাতনের ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে ইয়াছমিন আক্তার আলীকদম থানায় স্বামী মহিউদ্দিনকে আসামি করে অভিযোগও দিয়েছেন। এতেও ক্ষান্ত হয়নি পাষÐ স্বামী।

গৃহবধু ইয়াছমিন আক্তার বলেন, ৬/৭ মাস আগে বাপের বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য তাকে চাপ দিতে থাকে স্বামী মহিউদ্দিন। এই অবস্থায় শিশু সন্তানকে নিয়ে তিনি বাপের বাড়ি চকরিয়ার বরইতলীতে চলে আসতে বাধ্য হন। এরই মধ্যে সর্বশেষ ৯ ফ্রেব্রয়ারী সকালে স্বামী মহিউদ্দিন বরইতলীস্থ আমার বাপের বাড়িতে এসে পুনরায় যৌতুকের দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এসময় আমি টাকা দিতে পারবেনা জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর মারধর শুরু করে মহিউদ্দিন। ঘটনার সময় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবার সদস্যরা আমাকে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনা পর অভিযুক্ত যৌতুকলোভী স্বামী মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেন গৃহবধূ ইয়াছমিন আক্তার। পরে আদালত স্বামী মহিউদ্দিনের নামে পরোয়ানা জারি করে তাকে গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আলীকদম থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
আদালতের পরোয়ানা হাতে পেয়ে অবশেষে গত বুধবার ১৫ জুন আলীকদম থানা পুলিশ নিজ বাড়ি থেকে আসামি মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

পাঠকের মতামত: